খাঁটি গুড় চেনার উপায়- গুড় খাওয়ার উপকারিতা জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি খাঁটি গুড় চেনার উপায় জানতে চাচ্ছেন, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোস্টে খাঁটি গুড় চেনার উপায়, খেজুরের গুড়ের উপকারিতা এবং খেজুরের বিভিন্ন বিভিন্ন দিক তুলে ধরব। আপনি পোস্টে পড়তে থাকুন এতে করে আপনার সবকিছু জানতে পারবেন।
খাঁটি গুড় চেনার উপায়
এছাড়াও আপনি এ পোস্টে পাবেন আখের অরিজিনাল গুড় চেনার উপায়,গুড়ের ক্ষতিকর দিক। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

বাংলাদেশের সাধারণত গুড়ের প্রচলন শীতকালে বেশি থাকে। শীত আসার সাথে সাথে খেজুরের গাছের রস এবং সেখান থেকে গুড় তৈরি করা হয়। এই গুড় দিয়ে আমরা শীতকালে অনেক পিঠাপুরি খেয়ে থাকি এবং সকালের রুটির সাথেও খেয়ে থাকি। শীতকালে খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। আরেক ধরনের গুড় পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে আখের গুড়। এটা সাধারণত আখের সিজনে পাওয়া যায়। এটা আখ থেকে তৈরি হয়।


আমরা আখের গুড় দিয়ে শরবত খেয়ে থাকি যেটা আমাদের জন্য খুব উপকারী বিশেষ করে রমজান মাসে আমরা আখের গুড় দিয়ে শরবত করে খেয়ে থাকি যেটা আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই গুড় কেনার ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়ে থাকি। কোনটা খাঁটি এবং কোনটা ভেজাল বুঝতে পারি না। তাই আমি এ পোস্টে কিভাবে আপনি খাঁটি গুড় চিনবেন সেসব সম্পর্কে বলবো। আপনি পড়তে থাকুন তাহলে সবকিছু জানতে পারবেন।

খেজুরের খাঁটি গুড় চেনার উপায়

আমাদের বাজারে এবং পাড়া মহল্লায় খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। আমরা অনেকে বাজারে কিনতে গিয়ে প্রতারিত হই। বিশেষ করে বাজারে কেনার ক্ষেত্রে বেশি প্রতারিত হয়। আমি আপনাকে খাঁটি গড় চেনার উপায় সম্পর্কে বলবো এরপর থেকে আপনি আর গুড় কিনতে গিয়ে প্রতারিত হবেন না। তাই চলুন এবার সেসব উপায় জেনে নিন।
খেজুরের গুড় দুই প্রকারের হয়-
  1. পাটালি
  2. লালি
  • গুড় কেনার ক্ষেত্রে শুরুতে মাথায় রাখবেন যে পাঁচালী গুড় কখনো শক্ত হয় না এবং টকটকে কালারের হয় না।
  • আপনি যখন দোকানে গিয়ে কিনবেন তখন দোকানদারকে বলবেন যে সেখান থেকে একটু ভেঙে দিতে আপনি সেই অংশ নিয়ে মুখে দিবেন তারপর যদি আপনার কাছে নোনতা ভাব বা ভিন্ন রকম স্বাদ লাগে তাহলে বুঝবেন গুড়ের মধ্যে ভেজাল মিশানো আছে বা চিনি মিশানো আছে।
  • একটু চাপ দিয়ে দেখবেন যদি সেটা নরম হয় তাহলে সেটা খাটি গুড় আর যদি শক্ত হয় তাহলে সেটা ভেজাল গুড়।
  • মুখে দেয়ার পর যদি আপনার কাছে একটু তিতা ভাব লেগে তাহলে বুঝতে হবে যে গুড় তৈরি করার সময় যে রস জ্বাল দিয়েছে সে রসকে একটু পুড়িয়ে ফেলেছে। এজন্য এই তিতা ভাব রয়ে গেছে।
  • যেটা খাঁটি গুড় সেটার রং হয় হালকা কালচে বা বাদামি কালারের।এই দুই কালারের বাইরে যদি আপনি টকটকে কালারের গুড় দেখেন তাহলে সেটা বুঝবেন যে এখানে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো আছে। এরকম গুড় কেনা থেকে দূরে থাকবেন। এটা আপনার জন্য ক্ষতিকর।
  • গুড় কেনার সময় যদি দেখেন গুড়ের মধ্যে হালকা সাদা ভাব আছে তাহলে বুঝবেন যে রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়েছে সে রশের স্বাদ ভালো না বা রসের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। এরকম গুড় কেনা থেকেও বিরত থাকবেন।

খেজুরের গুড়ের উপকারিতা

আপনি যখন খাঁটি গুড় খাবেন তখনই আপনি গুড়ের যেগুলো উপকার রয়েছে সেসব পাবেন। তাই চলুন এবার আমরা সেই সব উপকার সম্পর্কে জেনে নিন।
  • অনেক সময় অনেক কারণে আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি হয়ে যায়। আপনি খেজুরের গুড় নিয়মিত খাওয়ার কারণে আপনার শরীরের যে পরিমাণ আয়রনের ঘাটতি রয়েছে সেটা পরিপূর্ণ করতে আপনাকে সাহায্য করবে।
  • যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা খেজুরের গুড়ের শরবত করে নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করবেন এতে করে আপনার হজমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • গুড় আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গুড় খাওয়ার পরে আমাদের শরীর গরম থাকে আর গরম থাকার কারণে শীতকালে আমরা সর্দি কাশি এবং এ জাতীয় সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে রক্ত পরিশোধন হয়। রক্তে যেগুলো দূষিত পদার্থ রয়েছে সেগুলো দূর করে দেয় এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা চাহিদা অনুযায়ী রাখতে সাহায্য করে।
  • খেজুরের গুড়ে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম রয়েছে যেটা আপনার লিভারকে ঠিক রাখতে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

আখের খাঁটি গুড় চেনার উপায়

গরমের সময় এবং রমজান মাসে শরবত হিসাবে খেয়ে থাকি। অনেক সময় আখের গুড় কিনতে গিয়েও আমরা অনেকে প্রতারিত হয়ে থাকি। চলুন এবার আখের পিওর গুড় কিভাবে চিনবেন সে সম্পর্কে জেনে নেয়। তাহলে আপনি আর প্রতারিত হবেন না।
  • আখের খাঁটি গুড় সবসময় মিষ্টি হয়। মিষ্টি ব্যতিত এটার কোন রকমের কোন সাধ হয় না।
  • গুড় কেনার সময় গুড়ের দুই পাশ ভালো করে লক্ষ্য করবেন যদি সেটা নরম হয় তাহলে সেটা খাঁটি গুড় তাছাড়া খাটি না।
  • খাঁটি গুড়ের মাঝের অংশ শক্ত হয়। এজন্য হাতের আঙুল দিয়ে চেক করে দেখবেন যে মাঝের অংশ শক্ত কি না।
  • আখের গুলোর রং একটু ভিন্ন রকমের হয়। কখনোই আখের গুড়ের রং চকচকে হবেনা। এজন্য রংয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন।

আখের গুড়ের উপকারিতা

খেজুরের গুড় খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি ভাবে আখের গুড় খাওয়ারও উপকারিতা রয়েছে। তাই চলুন এবার আমরা আখের গুড়ের উপকারিতা জেনে নেয়।
  • আপনার শরীরে অতিরিক্ত জমে থাকা চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
  • আখের গুড় খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা নির্ধারিত মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে।
  • আখের গুড় আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ এতে অনেক রকমের খনিজ উপাদান রয়েছে।
  • গলার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে যেমন গলা ব্যথা, হালকা কাশি এ জাতীয় সমস্যা।
  • আপনি যদি নিয়মিত শরবত খেয়ে থাকেন এতে করে আপনার রক্ত পরিষ্কার থাকবে।
  • আপনি খাবার খাওয়ার পরে এক চামচ করে বা হালকা পরিমাণ আখের গুড় খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে করে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য,পেটের সমস্যা যেসব রয়েছে তা দূর হয়ে যাবে।
  • গরমকালে আমরা সাধারণত অনেক ক্লান্ত হয়ে যায়। আপনি আখের গুড়ের শরবত করে খাওয়ার কারণে আপনার শরীরে অনেক পরিমাণে এনার্জি কাজ করবে।

আখের গুড়ের উপকার সবসময়ই বেশি এজন্য চেষ্টা করবেন সবসময় আখের গুড় খাওয়ার।

গুড়ের ক্ষতিকর দিক

গুড় যে শুধু উপকারী বিষয় এমন না। কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যেগুলো জানা আমাদের জন্য খুব জরুরী। তাছাড়া আমরা সেই ক্ষতিগুলোর মধ্যে পরে যেতে পারি। এজন্য আমি নিচে গুড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরলাম-
  • গুড় খাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাবেন না। এতে করে আপনার ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
  • গুড় তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই খাবেন না। এতে করে আপনার হজমের সমস্যা হতে পারে।একটু সময় দিয়ে ঠান্ডা হওয়ার পরে খাবেন।
  • প্রচন্ড গরমে গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এতে করে আপনার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই গরম থেকে এসে প্রথমে ঠান্ডা হয়ে তারপরে গুড়ের শরবত খাবেন।
  • মাছ আর গুড় একসাথে খাবেন না। এতে করে আপনার আলসারের সমস্যা হতে পারে।
  • ইদানিং কেমিক্যাল পদার্থ এবং চিনি বেশি ব্যবহার করে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য গুড় খাওয়া থেকে খুব বেশি সতর্ক থাকবেন। তাছাড়া আপনাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

উপসংহার

গুড় আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় একটি প্রসাধণী। গুড় ছাড়া পিঠাপুলি কোনটাই সম্ভব হয় না আর সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক স্বাদ পাওয়া যায় না। আমরা বাজার থেকে কেনা গুড় খাওয়ার ফলে বর্তমানে অসুস্থ হয়ে যায়। এজন্য আমাদের উচিত যখন আমরা কিনব তখন আমরা নির্ভরযোগ্য কোন জায়গা অথবা যে উপায়গুলোতে খাটি গড় চেনা যায় সেগুলো লক্ষ্য করে কেনার চেষ্টা করব।

আমার এই পোস্ট আপনার ভালো লাগলে আপনি আপনার বন্ধু মহল এবং আত্মীয়স্বজনের মাঝে শেয়ার করবেন যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url